Home Style Tips

ইন্টেরিওর ডিজাইনের পাঁচটি সাধারণ ভুল ও তা সংশোধন করার উপায়

November 12, 2020 | By

প্রত্যেকেরই নিজ নিজ বাড়ির সাজসজ্জা নিয়ে নিজস্ব এবং আলাদা একটি মতামত থাকে। কিন্তু আপনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত কি আসলেই সবসময় সঠিক হবে? বাস্তবিকভাবে… আপনি যদি পেশাদার ইন্টেরিওর ডিজাইনার না হন, তবে সেই ক্ষেত্রে আপনার কিছু ভুল হয়ে যেতেও পারে। ব্লগের এই লেখার মধ্যে আমারা আলোচনা করব ইন্টেরিওর ডিজাইনের পাঁচটি সাধারণ ভুল এবং সেগুলো কিভাবে সংশোধন করা যায়। 

অপর্যাপ্ত আলো

আলোক ব্যবস্থা যেকোনও স্থানের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য কারণ সেই স্থানের পরিবেশ ও আবহাওয়া অনেকটাই নির্ভর করে আলোর পর্যাপ্ততার উপর । বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ওভারহেড লাইটিং কর্মক্ষেত্র বা হাসপাতালের জন্য গ্রহণযোগ্য হলেও সেটি আপনার বাড়িতে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেনা কারণ তা আপানর বাসার নান্দনিকতা নষ্ট করে অথবা আলোক শূন্যতার আভা সৃষ্টি করতে পারে। 

সংশোধনের উপায়

রিসেসড লাইটস – যা বাংলাদেশে সিলিং স্পট লাইট হিসাবে পরিচিত – সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় কোন স্থানের আলোক ঘাটতি কমানোর জন্য, কিন্তু এই সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার সেরা বন্ধু হতে পারে – ঝাড়বাতি, ওয়াল ল্যাম্প, ফ্লোর ল্যাম্প অথবা ঝুল বাতি। এছাড়া আলোক সরবারহের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলে সহজেই আপনি আপনার ইচ্ছা এবং মুড অনুযায়ী যেকোনো জায়গার পরিবেশ বদলে দিতে পারেন। দেয়ালে লাগানো যেকোনো চিত্রকল্প বা বাঁধাই করা ছবি ফুটিয়ে তোলার জন্য ওয়াল – মাউন্ট লাইট এর জুরি নেই, আবার অন্যদিকে আপনার পড়ার ঘর বা রান্নাঘরের জন্য টাস্ক লাইট পুরোই অকার্যকর।

স্থান অনুযায়ী মৃদু বা উজ্জ্বল আলোর ব্যবহারটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা একটি স্থানের নিজস্বতা বজায় রাখে। উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা সাধারণত হাসপাতাল, গুদাম ঘর অথবা বাণিজ্যিক অফিস আদালতের জন্য বেশি উপযোগী। অন্যদিকে, উষ্ণ আলোক ব্যবস্থা তৈরি করে আরামদায়ক ও একটি নিরাপদ পরিবেশের আবহাওয়া যা মনে এনে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া। বিশেষ করে গৃহসজ্জার ক্ষেত্রে ভিজ্যুয়াল ডায়নামিজম, মৃদু আলোর পাশাপাশি ল্যাম্পস, এবং নিচু করে ঝুলানো আলোকবাতি ভিন্ন ধরণের স্টাইল ও প্রসান্তি এনে দেয়। 

Image: saving-star.com

অধিক বড় বা ছোট আসবাবপত্র

আসবাবপত্রের দোকানে গিয়ে আপনার ক্রেডিট কার্ডটি ব্যবহারের আগে যদি আপনি প্রয়োজনীয় আসবাবের সঠিক মাপটি না জানেন তবে তার চেয়ে বড় বিপত্তি আর কিছুই হতে পারেনা। আপনি হয়ত ধারণাও করতে পারছেননা সঠিক মাপের আসবাবপত্র না কেনা অভ্যন্তরীণ সজ্জার ক্ষেত্রে কত বড় ভুল পদক্ষেপ। 

সংশোধনের উপায়

কোন স্থানের অভ্যন্তরীণ সজ্জার ক্ষেত্রে সেই স্থানের সঠিক পরিমাপ ও অনুপাত সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। প্রথমে আপনার স্থানটি পুরোপুরি পরিমাপ করা দরকার এবং তার চারপাশের জায়গার সাথে মিল রেখে আসবাবপত্রের সঠিক আকার এবং অনুপাত নির্ধারণ করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। ভুলক্রমে অধিক বড় বা ছোট আসবাবপত্র কিনে ফেলার আগে সম্পূর্ণ ঘর পরিমাপের পাশাপাশি ঘরের দরজা এবং জানালার দূরত্ব ও মাপাও জরুরি।

Image: Techcrunch

অসামঞ্জস্য আকারের কার্পেট 

পূর্ববর্তী পয়েন্টের মাপ পরিমাপের সাথে মিল রেখে আমরা পরবর্তী আরও একটু ভুল সনাক্ত করতে পারি যা হল, ভুল মাপের কার্পেট ব্যবহার করা। কার্পেট যেকোনো রুমের নকশা সহজেই বদলে দিতে পারে, যেমন – বসার ঘরের কার্পেটটি ও নির্ধারণ করে দিতে পারে ঘরটির মাঝে কতটুকু আন্তরিকতা বিরাজ করছে। খুব ছোট কার্পেট যেমন অনান্তরিকারতার প্রকাশ করে, তেমনি বিশাল বড় কার্পেট ও বেশ অসংলগ্ন এমনকি মনে হতে পারে পুরো ঘরটি গ্রাস করে ফেলছে।

সংশোধনের উপায়

বসার ঘরের কার্পেটটি চারপাশের আসন বিন্যাসের সাথে মিল রেখে নির্ধারণ করতে হবে যাতে সেটি রুমের অন্যান্য আসবাবের সাথে মিল রেখে একই ছন্দ প্রকাশ করতে পারে। রুমের আকারের উপর নির্ভর করে বসার ঘরের জন্য সঠিক কার্পেটের সাইজ ৮-বাই-১০ ফুট এবং ৯-বাই -১২ ফুটের মধ্যে হয়। স্বল্প পরিসরের জায়গা যেমন – প্রবেশপথ বা আয়নার সামনে ছোট কার্পেটটি ৪-বাই-৬ ফিটেই বেশ মানানসই হয়। একই সাথে, সঠিক জায়গায় আসবাবপত্র বসানো অত্যন্ত জরুরি। দেয়ালের সাথে বসানো আসবাবের সামনের দিকের দুই পা কার্পেটের উপর রাখতে হয় আবার অন্যদিকে বড় রুমের মাঝখানে যেই আসবাবপত্রগুলো থাকে সেগুলো পুরোটাই কার্পেটের উপর রাখতে হবে।

Image: Carlos Chavarria

অব্যবহৃত বারান্দা

ঢাকা শহরের বাসাবাড়িতে বারান্দার প্রচলন বেশ দেখা গেলও রোদে কাপড় শুকানো ছাড়া এর আর তেমন কোন ব্যবহার দেখা যায় না।

সংশোধনের উপায়

স্বল্প পরিসরের হলেও এই বারান্দাগুলোকে খুব সহজেই কার্যকরী করে তোলা যায়। প্রতিদিনের রান্নার কাজে ব্যবহৃত সাধারণ কিছু ভেজস গাছের বাগান থেকে শুরু করে অবসর সময় কাটানোর জন্য বিনোদনের স্থান হিসেবেও ব্যবহার করা যায় এই বারান্দাগুলো। এমনকি, বসার ঘরের সাথে লাগানো বারান্দাটিতে কিছু সঠিক আসবাব ব্যবহার করে সহজেই বসার ঘরের জায়গাটি বারিয়ে নেয়া যায়। 

Image: Bjurfors Göteborg

কারুকার্যহীন সাদা দেয়াল

সাদা দেয়াল মানেই ক্লাসিক – সরল, সাধারন, রঙহীন একটা খোলা জায়গা যেখানে আপনি সহজেই যেকোনো রঙ দিয়ে খেলা করতে পারেন। হতে পারে আপনার সাদা দেয়ালটি খালি ফেলে রাখার ফলে, পুরো জায়গাটির মাঝে একটা অনান্তরিকতার ছোঁয়া চলে এসেছে। 

সংশোধনের উপায়

চিত্রকল্প আপনার স্বাদ ও রুচি প্রকাশের সাথে সাথে সাদা খালি দেয়ালে এনে দেয় ভিন্ন এক মাত্রা। এখন এই দামী চিত্রকল্পগুলোর দাম বেশি হলেও, অপেক্ষাকৃত কম দামী চিত্রকল্পও কিন্তু  আপনার ঘরের দেয়ালে এনে দিতে পারে প্রাচুর্যের ছোঁয়া। সবচেয়ে কম দামে আপনি পেতে পারেন যে কোন ফ্রেমে বাঁধানো ছবি – যা আপনার সাদামাটা দেয়ালের শুন্যতা দূর করে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

Image: Futuristic Architecture

সংক্ষেপে বলা যায়, অভ্যন্তরীণ সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে পূর্ব পরিকল্পনা এবং জায়গার সঠিক মাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। খালিচোখে অভ্যন্তরীণ সজ্জা খুব সোজা সহজ মনে হলেও, আপনি যখন নিজে কাজটির সাথে যুক্ত হবেন তখন বুজতে পারবেন ডিজাইনের প্রক্রিয়াটি কতটা জটিল ও কষ্টসাধ্য। একজন পেশাদার ডিজাইনারের সহযোগিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সজ্জার কাজটি হয়ে উঠতে পারে অত্যন্ত সহজ। 

যদিও আপআতদৃষ্টিতে একজন পেশাদার ইন্টেরিওর ডিজাইনারের কাজ বেশ ব্যয়বহুল বলে মনে হলেও, যখন তার পরিকল্পনা, বিবেচনা, সহযোগিতা এবং অভ্যন্তরীণ সজ্জার কাজে নিবেদিত প্রচেষ্টা ও সময়কে অর্থের পাল্লায় মাপা হবে তখন অবশ্যই পূর্বের ধারণা ভুল প্রমাণিত হবেই, একই সাথে অভ্যন্তরীণ সাজ-সজ্জায় পেশাদার ইন্টেরিওর ডিজাইনার নিয়োগের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার সাথে সাথে আর্থিক সুবিধাও দেখা যাবে।

প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইন সহযোগীতা পেতে অথবা অনলাইনে ইন্টেরিওর ডিজাইন পরামর্শের জন্য, Sheraspace এর সাথে যোগাযোগ করুন, আজই!  

এই ব্লগটি English এ পড়ুন।

অনুবাদ: নিশাত সফুরা   

You Might Also Like

No Comments

Leave a Reply